জরাজীর্ণ এই সাঁকোটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে প্রাণহানী ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজের জন্য কেশবপুর, কলারোয়া, মনিরামপুর, তালা ও পাটকেলঘাটা উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে ত্রিমোহিনী বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদ পারাপার হতে হয়।
এক সময় স্থানীয়রা নৌকায় করে এই নদী পার হলেও, জনসাধারণের সীমাহীন দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০০১ সালে স্থানীয় লেয়াকত আলী জমিদারের উদ্যোগে ২০/২৫ জন মিলে পথচারীদের দুর্ভোগ লাঘবে কপোতাক্ষ নদের ওপর প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৭৫ ফুট এই সাঁকো নির্মাণ করেন।
এটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিএনপি মনোনিত এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব। এসময় তিনি সাঁকোর জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেন এবং জনস্বার্থে এই নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রতি দেন।
এরপর দীর্ঘ ১৯ বছরে সরকারের পালাবদল হলেও কপোতাক্ষ নদের ওপর ব্রিজের স্বপ্ন পূরণ হয়নি স্থানীয়দের। তাই প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই এই বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে পারাপার হতে হয় সাধারণ মানুষকে।
দীর্ঘদিন পার হলেও স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি এখন পর্যন্ত কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ না নেয়ায় অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে জনসাধারণের মাঝে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি নির্মিত হলে পাল্টে যেতে পারে কেশবপুর, তালা, কলারোয়া উপজেলার লোকজনের জীবনযাত্রার মান।
সরেজমিনে দেখা যায়, কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন।
শরিফুল ইসলাম, আব্দুল হান্নান, তরিকুল ইসলাম, জবান আলীসহ বেশ কয়েকজন কৃষক তাদের প্রতিদিনের কষ্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেতু না থাকায় যানবাহনের অভাবে কাঁধে ও মাথায় করে সবজি, ধান, পাট নিয়ে ত্রিমোহিনী ও কেশবপুর বাজারে যেতে হয় তাদের। এছাড়া বর্ষা মৗসুমে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, জনস্বার্থে প্রতিবছর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এই বাঁশের সাঁকোটি সংস্কার করা হয়ে থাকে। কপোতাক্ষ নদের ওপর একটি সেতু নির্মিত হলে এখান ৫টি উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাবে। আর এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণের পাশাপাশি সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে ত্রিমোহনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান আনিসুর রহমান বলেন, ত্রিমোহনীর কপোতাক্ষ নদের ওপর ব্রিজ না থাকায় দুই পারের স্কুল ও কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ শত শত মানুষের বাঁশের তৈরি এই সাঁকো পারাপারের কারণে মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ত্রিমোহনীতে তিন থেকে চারটা স্কুল ও কলেজ থাকায় কলারোয়া উপজেলার ও তালা উপজেলার বহু স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের এই বাঁশের সাঁকোই পারাপারের একমাত্র অবলম্বন। কাজেই এই কপোতাক্ষ নদের ওপর একটি ব্রিজ তৈরি খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বহুবার স্থানীয় এমপি মহোদয়কে বিষয়টি নিয়ে সমাধানের জন্য আলোচনা করেছি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত এর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বিষটি নিয়ে লিখিতভাবেও বহুবার এলজিইডি মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি।’
এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী মনছুর আলীর বলেন, ‘ত্রিমোহনীর কপোতাক্ষ নদের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা আমার দায়িত্ব নয়। এটা সাতক্ষীরা জেলা ও তালা উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলীদের দেখভাল করার দায়িত্ব।’